পৃথিবী রহস্যে ভরা। কিছু দ্বীপ আছে, যা সভ্যতার চোখের আড়ালে একা দাঁড়িয়ে আছে মহাসাগরের মাঝে। এই দ্বীপগুলোতে পৌঁছানো যেমন কঠিন, তেমনি এদের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যও অভূতপূর্ব। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত ৮টি দ্বীপ সম্পর্কে।
ট্রিস্টান দা কুনহাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে একান্ত ও দূরবর্তী জনবসতি। এটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত। এখানে মাত্র ২৫০ জন মানুষের বাস। দ্বীপটি পাথুরে পর্বত ও সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানকার মানুষ কৃষিকাজ ও মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।
প্যাসিফিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জে মাত্র ৫০ জন মানুষ বাস করে। এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনস্থ এবং এর ইতিহাস বিখ্যাত বিদ্রোহী দল **বাউন্টি মিউটিনির** সঙ্গে জড়িত। দ্বীপের প্রকৃতি ও নীল সমুদ্র আপনাকে এক মোহনীয় পরিবেশ উপহার দেবে। দ্বীপপুঞ্জটি মূলত এইচএমএস বাউন্টি জাহাজের বিদ্রোহী নাবিকদের ও তাদের তাহিতিয়ান সঙ্গীদের বসবাসের ফলে ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত।
বউভেট দ্বীপ (Bouvet Island) একটি অপ্রতিরোধ্য এবং পরিত্যক্ত দ্বীপ, যা দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। এটি নরওয়ের একটি অধিকৃত অঞ্চল এবং পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন স্থানে গণ্য হয়, যার উপকূলে কোনো স্থায়ী জনসংখ্যা নেই। তবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে একা ও প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি। বরফে আচ্ছাদিত এই দ্বীপটি মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। ---
চিলির উপকূল থেকে প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি রহস্যময় **মোয়াই মূর্তি**গুলোর জন্য বিখ্যাত। দ্বীপটি পলিনেশিয়ান সংস্কৃতির একটি অনন্য নিদর্শন। এখানকার মূর্তি ও ইতিহাস এখনও গবেষকদের জন্য এক বিশাল রহস্য। ইস্টার দ্বীপের বাসিন্দারা একসময় শক্তিশালী একটি সভ্যতা গঠন করেছিল, কিন্তু পরিবেশগত সমস্যা ও সম্পদ সংকটের কারণে তারা ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। ---
ভারত মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত এই দ্বীপটি এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের যৌথ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিমান, নৌবাহিনী, এবং অন্যান্য সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।। দ্বীপটি প্রাকৃতিক দিক থেকে চমৎকার হলেও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটি তার বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে বিশেষভাবে পরিচিত।
অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি সুন্দর সবুজ বনভূমি ও সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। এখানে মাত্র ২,০০০ জনের মতো মানুষের বসবাস। দ্বীপটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। ---
ক্লিপারটন দ্বীপ একটি ছোট এবং জনশূন্য দ্বীপ, যা প্রশান্ত মহাসাগরে মেক্সিকো উপকূল থেকে প্রায় ১,২৭০ কিলোমিটার (৭৯০ মাইল) দূরে অবস্থিত। এটি একটি ফরাসি অধিকারিত অঞ্চল, তবে তার অবস্থান এবং দূরত্বের কারণে এখানে কোনো স্থায়ী জনবসতি নেই। দ্বীপটির পরিচিতি মূলত এর অদ্ভুত ভূতত্ত্ব এবং সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবন দ্বারা, যা অনেক গবেষক ও পরিবেশবিদদের আকর্ষণ করে। দ্বীপটি অসংখ্য সামুদ্রিক পাখি ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল। ---
নেপোলিয়নের নির্বাসনস্থল হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। এখানে প্রায় ৪,৫০০ জন মানুষের বসবাস। সেন্ট হেলেনার পাহাড়, উপত্যকা ও সাগরের সৌন্দর্য এককথায় মনোমুগ্ধকর। ---
এই প্রত্যন্ত দ্বীপগুলো আমাদের পৃথিবীর বৈচিত্র্য ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের উদাহরণ। যান্ত্রিক জীবনের বাইরে এসে যদি নির্জনতা ও প্রকৃতির মেলবন্ধন উপভোগ করতে চান, তাহলে এই দ্বীপগুলো হতে পারে আপনার জন্য অনন্য গন্তব্য। তো বন্দুরা, এখানে কোন দ্বীপটি আপনার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এবং আপনি যেতে চান, তা নিচে কমেন্ট করে জানান।