ডোনাল্ড জন ট্রাম্প হলেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০২৫ সালে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তার জীবনী জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তার শৈশব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউ ইয়র্কের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প একজন সফল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প ছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত। ছোটবেলা থেকেই ট্রাম্পের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি দেখা যায়। তিনি নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।
ট্রাম্প তার বাবার কোম্পানি ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প অ্যান্ড সন’-এ কাজ শুরু করেন এবং পরে এটি ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ নামে পুনর্গঠন করেন। নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন জায়গায় তিনি বিলাসবহুল হোটেল, ক্যাসিনো এবং গগনচুম্বী ভবন নির্মাণ করেন। ট্রাম্প টাওয়ার, ট্রাম্প প্লাজা, এবং আটলান্টিক সিটির ক্যাসিনো ব্যবসায় তার ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়।
📷©Image Source: FreeMalaysiaToday.com
ট্রাম্প শুধু ব্যবসায়ী হিসেবেই সফল নন, বরং তিনি বিনোদন জগতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। ২০০৪ সালে এনবিসি চ্যানেলে তার রিয়েলিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ প্রচারিত হয়, যা তাকে সারাবিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলে। এই শোয়ের বিখ্যাত সংলাপ "You're Fired!" ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে সংযুক্ত থাকলেও ২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার প্রশাসনের সময় অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং অভিবাসন নীতির ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, অভিবাসন নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিশ্রুতি মূল ভূমিকা পালন করে।
📷 © Image Source: Wikimedia Commons
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। তিনি কর হ্রাস, অভিবাসন নীতি কঠোরকরণ, চীন-বিরোধী বাণিজ্য নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করেন। তবে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিতর্কও ছিল, যার মধ্যে ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিশংসন অন্যতম। ২০২৫ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়, যেখানে তিনি কর নীতি সংস্কার, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে নতুন উদ্যোগ নেন।
📷 © Image Source: CC BY-SA 4.0
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ আলোচিত। তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প, দ্বিতীয় স্ত্রী মারলা ম্যাপলস এবং বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। তার সন্তানদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং এরিক ট্রাম্প ব্যবসা ও রাজনীতিতে সক্রিয়।
📷 © Image Source: PICRYL
ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যতিক্রমী নেতা যিনি ব্যবসা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। তার জীবনযাত্রা, সিদ্ধান্ত এবং কর্মযজ্ঞ তাকে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। তার জীবনী থেকে আমরা শিখতে পারি যে পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও কৌশলী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এক ব্যক্তি কীভাবে বিশ্ব মঞ্চে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারেন।